ভারতের আগ্রাসী ভূরাজনীতির জবাব: তুরস্ক-পাকিস্তান সামরিক সহযোগিতা ও দক্ষিণ এশিয়ায় নতুন প্রতিরোধ বলয় গঠনের সময়:
RAZNITI প্রতিবেদক | ১৭ মে ২০২৫
দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতি এক অগ্নিগর্ভ সময়ে প্রবেশ করছে। একদিকে ভারত তার আগ্রাসী ও আধিপত্যবাদী কৌশল দিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোকে প্রতিনিয়ত চাপে রাখছে, অন্যদিকে তুরস্ক ও পাকিস্তানের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা দক্ষিণ এশিয়ায় নতুন এক প্রতিরোধ বলয়ের সূচনা করছে—যা বাংলাদেশের মতো রাষ্ট্রের জন্য একটি কৌশলগত সুযোগও বটে।
তুরস্ক-পাকিস্তান প্রতিরক্ষা জোট: এক বিকল্প বলয়ের উত্থান-
সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, তুরস্কের উন্নত প্রযুক্তিতে নির্মিত ড্রোন ও সামরিক সরঞ্জাম পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে এসেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সহযোগিতা ভারতীয় সামরিক আধিপত্যের বিপরীতে এক কৌশলগত শক্তির জন্ম দিয়েছে। ইসলামাবাদের হাতে অত্যাধুনিক ড্রোন প্রযুক্তি আসায় ভারতের উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে সামরিক ভারসাম্য তৈরি হবে।
ভারতের আধিপত্যবাদ: ‘বন্ধুত্বের মুখোশে’ আক্রমণাত্মক নীতি:
ভারতের কৌশলগত অবস্থান পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, তারা শুধুমাত্র সামরিক দিক থেকেই নয় বরং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং প্রযুক্তিগত দিক থেকেও প্রতিবেশী দেশগুলোর উপর প্রভাব বিস্তার করে চলেছে। বাংলাদেশ, নেপাল ও শ্রীলঙ্কায় একাধিকবার অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ এবং সীমান্তে গুলি বর্ষণের ঘটনা তার উদাহরণ।
ভারতের তথাকথিত “Neighbourhood First” নীতি এখন কার্যত একটি আধিপত্যবাদী বলয় তৈরি করার প্রকল্পে রূপ নিয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে বাণিজ্য ও পানিবণ্টন নিয়েও বাংলাদেশকে একাধিকবার চাপে ফেলেছে নয়াদিল্লি।
বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের করণীয়: একটি কৌশলগত জোট গঠনের সময় এখনই:
এই প্রেক্ষাপটে পাকিস্তান ইতিমধ্যেই বিকল্প শক্তির খোঁজে তুরস্ক, চীন, ইরানসহ মুসলিম বিশ্বে কৌশলগত অংশীদারিত্ব গড়ে তুলছে। বাংলাদেশেরও এখন দরকার নিরপেক্ষ নীতি ত্যাগ করে “আন্তর্জাতিক কৌশলগত বন্ধুত্ব” নীতিতে প্রবেশ করা। দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতা, মুসলিম বিশ্বভিত্তিক সামরিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা এবং বহুপাক্ষিক জোটে অংশগ্রহণ সময়ের দাবি হয়ে উঠেছে।
বাংলাদেশের জন্য সম্ভাব্য পদক্ষেপ:
- তুরস্ক ও পাকিস্তানের সঙ্গে প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ বিনিময় চুক্তি করা:
— বিশেষ করে সাইবার নিরাপত্তা, ড্রোন প্রযুক্তি, বর্ডার সার্ভেইল্যান্স ইত্যাদিতে। - আন্তঃমুসলিম প্রতিরক্ষা ফোরাম গঠন নিয়ে উদ্যোগ নেওয়া:
— ওআইসি বা D-8 এর মতো প্ল্যাটফর্মে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বাড়ানো। - চীন, ইরান, মালয়েশিয়া, কাতার, ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে বহুপাক্ষিক প্রতিরক্ষা ও বাণিজ্য জোট গড়ে তোলা:
— ভারত ও পশ্চিমা আধিপত্যের বিকল্প গড়ে তুলতে। - আঞ্চলিক সংবাদ মাধ্যম ও বুদ্ধিবৃত্তিক পরিসরে ভারতীয় আগ্রাসনের তথ্য উন্মোচন :
— Soft power-এর লড়াইয়ে জয়ী হতে তথ্য-সন্ত্রাসের জবাব দিতে হবে তথ্য-যুদ্ধে। - সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার ও প্রতিরক্ষা বাজেট পুনর্বিন্যাস:
— যেখানে সীমান্তবর্তী অঞ্চল ও উচ্চ-প্রযুক্তি প্রতিরক্ষা খাতে বিশেষ বরাদ্দ থাকবে।
রাজনীতি মন্তব্য:
ভারত যদি দক্ষিণ এশিয়াকে একতরফা আধিপত্যের বলয়ে রূপান্তর করতে চায়, তবে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের উচিত এই সঙ্কটকে সম্ভাবনায় রূপান্তরিত করা। একটি স্বাধীন, আত্মনির্ভর ও মর্যাদাপূর্ণ কূটনৈতিক অবস্থান এখন সময়ের দাবি। তুরস্কের মত পরীক্ষিত বন্ধুদের সঙ্গে যৌথ অংশীদারিত্ব গড়ে তুলে দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তিপূর্ণ প্রতিরোধের ভিত্তি গড়া প্রয়োজন।