কুড়িগ্রাম উলিপুরে বিএনপি কমিটিতে আ:লিগ দোসরদের পদ অভিযোগে পদত্যাগ ৪ নেতার, কমিটিবাতিলের দাবি।
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি, ১৬ মে ২০২৫: কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলা ও পৌর বিএনপির সদ্য ঘোষিত আহ্বায়ক কমিটিকে ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। আওয়ামী লীগপন্থী ও অযোগ্যদের কমিটিতে অন্তর্ভুক্তির অভিযোগ এনে ৪ জন বিএনপি নেতা পদত্যাগ করেছেন।
শুক্রবার (১৬ মে) দুপুরে উলিপুর পৌর শহরের হাজী সুপার মার্কেটের একটি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে পদত্যাগের ঘোষণা দেন নেতারা। পদত্যাগকারী নেতারা হলেন—উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আমিনুল ইসলাম ফুলু, পৌর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নুরে ছাবা স্টার, মতলেবুর রহমান মঞ্জু ও সদস্য আমিনুল ইসলাম।
‘আ.লীগের দোসরদের পদ’ দেওয়ার অভিযোগ:
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আমিনুল ইসলাম ফুলু অভিযোগ করেন, নবগঠিত কমিটিতে আওয়ামী লীগের সহযোগীদের জায়গা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক তারিক আবুল আলা চৌধুরী দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে দলের কোনো কর্মসূচিতে অংশ নেননি এবং অতীতে পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগপন্থী কাউন্সিলরকে প্যানেল মেয়র করেছিলেন। এমনকি জেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে ভোট দিয়েছেন বলেও দাবি করা হয়।
ফুলু আরও জানান, সদ্য ঘোষিত কমিটিতে “জাতীয় পার্টি ও ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর” সহিদুর রহমানকে ১৮ নম্বর সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে, যিনি একাধিক মামলার আসামি। এছাড়া সাইফুল ইসলাম বাদল ও রফিকুল ইসলাম—যাদের বিরুদ্ধে অতীতে নৌকা প্রতীকের পক্ষে কাজ করার অভিযোগ রয়েছে—তাদেরও গুরুত্বপূর্ণ পদে রাখা হয়েছে।
কমিটি বাতিলের দাবি ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের হস্তক্ষেপ কামনা:
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, ত্যাগীদের উপেক্ষা করে বিতর্কিত ব্যক্তিদের আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে পদ দেওয়া হয়েছে। এ অবস্থায় তারা নবগঠিত উপজেলা ও পৌর বিএনপির কমিটি বাতিল করে নতুন করে ত্যাগীদের মূল্যায়ন করার জন্য বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
জেলা নেতাদের পাল্টা বক্তব্য:
উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক তারিক আবুল আলা চৌধুরী অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “আমি দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির নেতৃত্বে আছি। জনগণ জানে আমি দলের পক্ষে কাজ করেছি।” জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সোহেল হোসনাইন কায়কোবাদ বলেন, “যারা আন্দোলনে ছিলেন তাদেরই মূল্যায়ন করা হয়েছে। অন্য যাদের অভিযোগ রয়েছে, তারা স্বার্থ হাসিল করতে না পারায় এমন বিতর্ক তৈরি করছেন।”
জেলা আহ্বায়ক মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, “কমিটি নিয়ে কেউ পদত্যাগ করেছে, এমন কোনো লিখিত পত্র এখনো পাইনি। অর্থের বিনিময়ে কমিটি গঠনের অভিযোগ ভিত্তিহীন।”
কমিটি ঘোষণা ও প্রেক্ষাপট:
গত ১৪ মে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা ও সদস্য সচিব সোহেল হোসনাইন কায়কোবাদ স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ২১ সদস্যবিশিষ্ট উপজেলা আহ্বায়ক কমিটি এবং ২৫ সদস্যের পৌর আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকেই দলীয় অভ্যন্তরে অসন্তোষের সৃষ্টি হয়।