Friday, May 23, 2025
Homeবানিজ্যকেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ভেঙে দুটি নতুন বিভাগ?

কেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ভেঙে দুটি নতুন বিভাগ?

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ভেঙে দুটি নতুন বিভাগ: কর ব্যবস্থায় ঐতিহাসিক সংস্কার আনল অন্তর্বর্তী সরকার

ঢাকা, ১৩ মে ২০২৫ | টাইমস বাংলাদেশ রিপোর্ট

বাংলাদেশের রাজস্ব ব্যবস্থায় একটি বড় কাঠামোগত সংস্কারের অংশ হিসেবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভেঙে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে দুটি পৃথক বিভাগ গঠন করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। নতুন এই দুটি বিভাগ হলো: রাজস্ব নীতি বিভাগ এবং রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ভেঙে দুটি নতুন বিভাগ
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ভেঙে দুটি নতুন বিভাগ

সরকারের ভাষ্য অনুযায়ী, এই পদক্ষেপের মূল লক্ষ্য হলো রাজস্ব নীতি প্রণয়ন এবং রাজস্ব আহরণ ব্যবস্থাপনাকে পৃথক করা। এর মাধ্যমে দেশের কর ব্যবস্থায় দক্ষতা বৃদ্ধি, স্বার্থের দ্বন্দ্ব হ্রাস এবং রাজস্ব আহরণের আওতা সম্প্রসারণ সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এনবিআর পুনর্গঠনের পেছনে প্রেক্ষাপট

প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত এনবিআর ধারাবাহিকভাবে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয়ে আসছিল। বর্তমানে বাংলাদেশের কর-জিডিপি অনুপাত মাত্র ৭.৪ শতাংশ, যা এশিয়ার সর্বনিম্ন অনুপাতগুলোর একটি। বিশ্বব্যাপী গড় অনুপাত ১৬.৬ শতাংশ এবং মালয়েশিয়ায় এটি ১১.৬ শতাংশ। বিশ্লেষকদের মতে, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশকে কর-জিডিপি অনুপাত কমপক্ষে ১০ শতাংশে উন্নীত করতে হবে।

এনবিআরের কাঠামোগত সমস্যাসমূহ

১. স্বার্থের দ্বন্দ্ব:
একই প্রতিষ্ঠানের অধীনে কর নীতি প্রণয়ন এবং কর আদায়ের দায়িত্ব থাকায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা ব্যাহত হয়েছে। এতে নীতির সাথে আপোস এবং অনিয়মের সুযোগ তৈরি হয়েছে।

২. কর্মদক্ষতার অভাব:
কর আদায়কারীদের পারফরম্যান্স পরিমাপের জন্য কোনো নির্দিষ্ট সূচক বা মূল্যায়নব্যবস্থা নেই। ফলে দক্ষতার অভাব এবং উৎসাহের ঘাটতি দেখা যায়।

৩. ধীরগতির রাজস্ব আহরণ:
নীতিনির্ধারণ ও ব্যবস্থাপনা একই ছাদের নিচে থাকায় উভয় কার্যক্রমেই গুরুত্ব কমে যায়, যার ফলে রাজস্ব সম্ভাবনার পুরোটা অর্জন সম্ভব হয় না।

৪. দুর্বল শাসনব্যবস্থা:
আইন ও বিধির অসামঞ্জস্যপূর্ণ প্রয়োগ এবং বিনিয়োগে প্রতিবন্ধকতা কর ব্যবস্থায় আস্থা কমিয়েছে।

৫. আমলাতান্ত্রিক ওভারল্যাপ:
একই ব্যক্তি অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের প্রধান এবং এনবিআর চেয়ারম্যান হওয়ায় সিদ্ধান্ত গ্রহণে দ্বন্দ্ব ও অদক্ষতা দেখা দিয়েছে।

নতুন কাঠামোর সম্ভাব্য সুফল

১. দায়িত্বের সুস্পষ্ট বণ্টন:
রাজস্ব নীতি বিভাগ কর আইন প্রণয়ন, হার নির্ধারণ ও আন্তর্জাতিক কর চুক্তি ব্যবস্থাপনায় কাজ করবে। অপরদিকে, রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ নীতির বাস্তবায়ন, নিরীক্ষা এবং প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা করবে। এতে নীতিনির্ধারক ও বাস্তবায়নকারীর মধ্যকার যোগসাজশের সম্ভাবনা কমবে।

২. দক্ষতা ও স্বচ্ছতা বৃদ্ধি:
পৃথকীকরণের ফলে উভয় বিভাগ নিজ নিজ মূল লক্ষ্য অর্জনে মনোযোগ দিতে পারবে। এতে দক্ষতা বাড়বে, স্বার্থের দ্বন্দ্ব কমবে এবং জবাবদিহিতামূলক প্রশাসন গড়ে উঠবে।

৩. করের আওতা বৃদ্ধি ও প্রত্যক্ষ কর শক্তিশালীকরণ:
পরোক্ষ করের উপর নির্ভরতা কমিয়ে, দক্ষ জনবল ব্যবহার করে প্রত্যক্ষ কর ব্যবস্থাকে আরও কার্যকর করার সুযোগ সৃষ্টি হবে।

৪. দীর্ঘমেয়াদি ও উন্নয়নমুখী নীতি প্রণয়ন:
স্বল্পমেয়াদি রাজস্ব লক্ষ্যের বাইরে গিয়ে ভবিষ্যতপ্রস্তুত কৌশল প্রণয়নে সমর্থ হবে নতুন নীতি বিভাগ।

৫. বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধির সুযোগ:
নির্ভরযোগ্য ও পেশাদার কর প্রশাসনের ফলে বেসরকারি খাতের আস্থা বৃদ্ধি পাবে এবং দীর্ঘদিনের অভিযোগ কমে আসবে।

উপসংহার

এই কাঠামোগত রদবদল কেবল প্রশাসনিক নয়; এটি একটি ন্যায্য, দক্ষ ও ভবিষ্যতমুখী কর ব্যবস্থা গঠনের অভীষ্ট লক্ষ্যপূরণের জন্য নেওয়া একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে বাংলাদেশের রাজস্ব নীতি প্রণয়ন ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করাই এই সংস্কারের মূল উদ্দেশ্য।

RELATED ARTICLES

Most Popular