ধরলা অববাহিকায় রাতভর বৃষ্টি: কুড়িগ্রাম শহরে জলাবদ্ধতায় জনদুর্ভোগ চরমে:
ডিসি অফিস থেকে কোর্ট চত্বর— হাঁটু পানি পেরিয়ে চলতে হচ্ছে মানুষকে:
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি | ২০ মে ২০২৫
রাতভর ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে কুড়িগ্রামের ধরলা ও তিস্তা অববাহিকায় সৃষ্টি হয়েছে চরম জলাবদ্ধতা। মঙ্গলবার সকাল থেকে শহরের প্রশাসনিক ও গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় পানি জমে গিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ভয়াবহ জনভোগান্তি। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, জজ কোর্ট, এসপি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং সাধারণ সেবাপ্রার্থীরা।
স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ধরলা অববাহিকায় ২১২ মিলিমিটার ও তিস্তা এলাকায় ১৯১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। এর ফলে শহরের রাস্তাঘাট, অলিগলি এমনকি সরকারি অফিসপাড়া পানিতে তলিয়ে গেছে।
পানি ডিঙিয়ে অফিস—“বারান্দা পর্যন্ত পানি উঠে গেছে”
মঙ্গলবার সকাল থেকে শহরজুড়ে জজ কোর্ট মোড়, ডিসি অফিস সড়ক, পুলিশ লাইনস এলাকা, ফায়ার সার্ভিস চত্বরসহ প্রধান সড়কগুলো হাঁটু পানিতে তলিয়ে যায়। বিশেষ করে ডিসি অফিস চত্বরের বারান্দা পর্যন্ত পানি উঠে যাওয়ায় প্রবেশে ভোগান্তির সীমা ছিল না।
জেলা প্রশাসনের এক কর্মচারী বলেন,
“স্যাররা তো গাড়িতে করে নামেন। কিন্তু আমরা আর সাধারণ মানুষ— এই নোংরা পানি মাড়িয়ে অফিসে ঢুকি। প্রতি বছর এই ভোগান্তি বাড়ছে।”
ড্রেনেজ দখল ও ময়লা জমার অভিযোগ:
জলাবদ্ধতার প্রধান কারণ হিসেবে শহরের ড্রেনগুলোর ব্লকেজ এবং অবৈধ স্থাপনার কথা জানিয়েছেন সচেতন নাগরিকরা। অভিযোগ উঠেছে, শহরের গুরুত্বপূর্ণ ড্রেনগুলো দখল করে দোকান ও বসতঘর নির্মাণ করায় পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। নিয়মিত পরিষ্কার না হওয়ায় ড্রেনে জমেছে ময়লা ও কাদা, যা প্রতিটি বর্ষায় পরিস্থিতিকে করে তোলে ভয়াবহ।
ফেসবুকে ক্ষোভে ফুঁসছে নাগরিক সমাজ:
ডিসি অফিস চত্বরের হাঁটু পানিতে থইথই অবস্থা নিয়ে অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যঙ্গাত্মক ও ক্ষোভমিশ্রিত পোস্ট দিচ্ছেন। কুড়িগ্রাম আলিয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা নূর বখ্ত লিখেছেন,
“১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত ‘ক’ শ্রেণির পৌরসভা। আজও সামান্য বৃষ্টিতে সৃষ্টি হয় প্লাবন। ড্রেনেজ ব্যবস্থা ধ্বংসপ্রাপ্ত। এখনই সময় অবৈধ দখল উচ্ছেদ করে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার।”
জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা রাজ্য জ্যোতি লিখেছেন,
“সাঁতার শিখতে ডিসি অফিসের সামনে যাচ্ছি!”
পৌরসভার প্রধান নির্বাহী: “সমস্যা চিহ্নিত, কাজ শুরু করেছি”
ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার বিষয়টি স্বীকার করে কুড়িগ্রাম পৌরসভার নতুন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হোসাইন মোহাম্মদ হাই জকী বলেন,
“বহু স্থানে ড্রেন ব্লকড, অবৈধ স্থাপনা ও মানুষের অসচেতনতা দায়ী। অতীত প্রশাসন যথাযথ পদক্ষেপ নেয়নি। আমরা উচ্ছেদ শুরু করেছি। সময় লাগবে, তবে উন্নতি হবে।”