Friday, May 23, 2025
Homeকুড়িগ্রামবিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েও অনিশ্চিত মইনুলের ভর্তি, স্বপ্ন পূরণের পথে দারিদ্র্যের বাঁধা।

বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েও অনিশ্চিত মইনুলের ভর্তি, স্বপ্ন পূরণের পথে দারিদ্র্যের বাঁধা।

স্বপ্ন পূরণের পথে দারিদ্র্যের বাঁধা: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েও অনিশ্চিত মইনুলের ভর্তি।

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে কুড়িগ্রামের সীমান্তঘেঁষা ফুলবাড়ী উপজেলার সাবেক ছিটমহল দাসিয়ারছড়ার দোলাটারী গ্রামের মেধাবী শিক্ষার্থী ময়নুল হক। ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগে মেধাক্রমে ৩৫৮ তম হয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেলেও চরম আর্থিক সংকট তার এই স্বপ্নপূরণে বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েও অনিশ্চিত মইনুলের ভর্তি!
বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েও অনিশ্চিত মইনুলের ভর্তি!

ময়নুলের বাবা লুৎফর রহমান ছিলেন একজন ইটভাটার শ্রমিক। সামান্য আয় দিয়েই সংসার চালিয়ে সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ চালিয়ে গেছেন নিরবধি। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, যেদিন ময়নুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পায়, সেদিন রাতেই তার বাবা মারা যান ব্রেইন টিউমারে আক্রান্ত হয়ে। স্বামীর চিকিৎসায় পরিবার তাদের সামান্য জমি ও গবাদিপশু বিক্রি করে সর্বস্ব হারিয়েছে বলে জানান ময়নুলের মা মায়া বেগম।

বর্তমানে ময়নুলদের পরিবার একটি মাত্র জরাজীর্ণ টিনের ঘরে বসবাস করছে, যার আয়তন মাত্র তিন শতক। পরিবারে এখন উপার্জনক্ষম কেউ নেই। মা মায়া বেগম তিন সন্তান নিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছেন। চোখে জল ধরে রাখতে না পেরে বলেন, “স্বামীর মৃত্যুর পর ভরসা ছিল বড় ছেলে। কিন্তু এখন তার স্বপ্ন বাস্তবায়নই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।”

ছাত্র অবস্থায়ই পারিবারিক অভাব মোচনে ময়নুল প্রাইভেট পড়ানো এবং দিনমজুরের কাজ করতেন। বাবার চিকিৎসার সময় ঢাকায় ভর্তি কোচিং করার জন্য ধার করে যান। টাকার অভাবে ক্লাস চলাকালীন সময়ে দিনের পর দিন উপোস ছিলেন বলেও জানান তিনি। “পরে রুমমেটরা জানতে পেরে খাবারের ব্যবস্থা করেছিল,” বলেন ময়নুল।

তিনি আরও বলেন, “ছোটবেলা থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন দেখতাম। অনেক কষ্ট করে এখানে এসেছি। কিন্তু ভর্তি ও পড়াশোনার খরচ জোগাতে পারবো কিনা জানি না। সরকার বা সমাজের বিত্তবানরা যদি পাশে দাঁড়ান, তাহলে আমি তাদের কাছে চির কৃতজ্ঞ থাকবো।”

এ বিষয়ে ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রেহেনুমা তারান্নুম বলেন, “এই মেধাবী শিক্ষার্থীর বিষয়ে এখনও অফিসিয়ালভাবে কিছু জানতে পারিনি, তবে খোঁজখবর নিচ্ছি। তার পাশে দাঁড়ানোর জন্য যথাসম্ভব চেষ্টা করা হবে।”

আগামী ৫ মে ময়নুল হকের ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার শেষ তারিখ। সমাজের সহৃদয় ব্যক্তিদের একটু সহায়তা হয়তো ময়নুলের স্বপ্নপূরণে আলোর দেখাতে পারে।

RELATED ARTICLES

Most Popular